দেশের পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন হতে যাচ্ছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন ২৫ মে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনে রিটার্নিং অফিসারের কাছে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় আগামী ২৭ এপ্রিল। মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে ৩০ এপ্রিল এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ৮ মে। গাজীপুরের পর দ্বিতীয় ধাপে খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণ হবে। এই দুই সিটিতে করপোরেশনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ১৬ মে। বাছাই হবে ১৮ মে এবং প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ মে। এই দুই সিটিতে ভোটগ্রহণ হবে ১২ জুন। তৃতীয় ধাপে রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই দুই সিটি করপোরেশনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৩ মে, বাছাই হবে ২৫ মে এবং প্রত্যাহারের শেষ সময় ১ জুন। আর ভোটগ্রহণ হবে ২১ জুন।
নির্বাচন সামনে রেখে ভোটারদের মন জয় করতে সদলবলে মাঠে নেমেছেন মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা। পথসভা থেকে শুরু করে দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভোট চাওয়া শুরু হয়ে গেছে। ভোটারদের কাছে নিজেদের প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরছেন প্রার্থীরা। এরই মধ্যে এসব সিটি করপোরেশন এলাকায় নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, ভোটের আগেই প্রার্থী এবং প্রার্থীদের পক্ষে অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নির্বাচনী আচরণবিধি মানানো নির্বাচন কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিধিভঙ্গের তালিকায় যুক্ত হয়েছেন অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আরো কয়েকজন। গাজীপুরে পৃথক তিন স্থানে নৌকা মার্কার প্রার্থীর সমর্থনে সভা করার অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাসীন দলের চার মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্যান্য প্রার্থীর সমর্থকরা এভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রতিবাদ করছেন। একাধিকবার আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে গাজীপুর সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লাহ খানকে আজ রবিবার নির্বাচন কমিশনে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। বরিশাল, রাজশাহী, খুলনা ও সিলেট সিটি করপোরেশনে প্রার্থী চূড়ান্ত ও প্রতীক বরাদ্দের আগেই আচরণবিধি ভঙ্গ করে নির্বাচনী প্রচার শুরু হয়ে গেছে। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র বা কাউন্সিলর—কোনো প্রার্থীই আচরণবিধি মানছেন না। বরিশাল নগরের বিভিন্ন এলাকায় এখনো শোভা পাচ্ছে ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার। প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের আগেই সিটি করপোরেশন এলাকায় এসব পোস্টার লাগানো হয়েছে।
যেকোনো নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনই হচ্ছে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। নির্বাচন কমিশন এই সার্বভৌম ক্ষমতা কতটা ব্যবহার করবে তার ওপর নির্ভর করছে একটি নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা। নির্বাচন কমিশন ক্ষমতা প্রয়োগ না করলে নির্বাচন বিতর্কিত হবে, গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। নির্বাচন কমিশন সবার সঙ্গে সমান আচরণ করলে সেই নির্বাচন অবশ্যই বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকবে। আবার সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করতে সংশ্লিষ্ট প্রার্থী এবং রাজনৈতিক দলগুলোকেও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হয়। ক্ষমতা অনেক সময় নির্বাচনী বিধিভঙ্গের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
অন্য সব নির্বাচনের মতো সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও আচরণবিধি রয়েছে। এই আচরণবিধি সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। কমিশনকে এখন থেকেই এ ব্যাপারে সচেতন ও কঠোর হতে হবে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মানতে সবাই বাধ্য। নির্বাচনের ক্ষেত্রে কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। নির্বাচন কমিশন ইচ্ছা করলেই প্রভাবশালীদের আচরণবিধি মানতে বাধ্য করতে পারে।
আমরা আশা করব নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেবে। আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসির কার্যকর ভূমিকা প্রত্যাশা করছি আমরা।