এক নজরে সাকিব আল হাসান
জন্ম ও পরিবার
বাংলাদেশের ক্রিকেটের ‘পঞ্চপাণ্ডবের’ একজন সাকিবের জন্ম ১৯৮৭ সালের ২৪ মার্চ মাগুরা জেলায়। পুরো নাম খন্দকার সাকিব আল হাসান ফয়সাল। ছোটবেলায় ফয়সাল নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন তিনি। বাবা মাশরুর রেজা ছিলেন বাংলাদেশ কৃষিব্যাংকের কর্মকর্তা এবং মা শিরিন শারমিন গৃহিণী। ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর উম্মে শিশিরের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন সাকিব।
অবসরের ঘোষণা দিলেন সাকিব
যুব ক্রিকেট
ক্রীড়া পরিবেশে বেড়ে ওঠা সাকিব ছোটবেলা থেকে ছিলেন খেলাপাগল। তার বাবা খুলনা বিভাগের হয়ে খেলেছেন ফুটবল। এমনকি তার এক স্বজন ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের ফুটবলার। তবে সাকিব বেছে নিয়েছেন ক্রিকেট। মাগুরা ক্রিকেট লিগের দল ইসলামপুরপাড়া ক্লাবে অনুশীলন করে পরে ভর্তি হন বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি)। ২০০৪ সালে ১৭ বছর বয়সে খুলনার হয়ে খেলেন জাতীয় লিগে। মাত্র পনেরো বছর বয়সে সাকিব বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলার সুযোগ পান।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিবের অভিষেক ২০০৬ সালে; জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে। ওই বছরেই টি-টোয়েন্টিতেও জাতীয় দলের ক্যাপ পান তিনি। পরের বছরের ১৮ মে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে অভিষেক হয় তার।
অধিনায়কত্ব
ধারাবাহিক ব্যর্থতায় ২০০৯ সালে অধিনায়কের পদ থেকে মোহাম্মদ আশরাফুলকে সরিয়ে দেয় বিসিবি। অধিনায়কত্ব পান মাশরাফী বিন মোর্তজা। আর তার ডেপুটি করা হয় সাকিবকে। পরে মাশরাফী ইনজুরিতে পড়লে অধিনায়কত্ব পান সাকিব। তার নেতৃত্বেই দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট সিরিজ জেতে বাংলাদেশ।
প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সাকিব আইসিসির টেস্ট প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার-২০০৯ এবং ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার-২০০৯ এর র জন্য মনোনয়ন পান তিনি। দ্য উইজডেন ক্রিকেটার্স সাকিবকে বছরের সেরা টেস্ট ক্রিকেটার নির্বাচিত করে।
অলরাউন্ডার তালিকায় শীর্ষে
২০০৯ সালে আইসিসির ওয়ানডে অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ে ১ নম্বরে উঠে আসেন সাকিব। সবচেয়ে বেশি সময় ধরে এই তালিকার শীর্ষে থাকার রেকর্ড তার দখলে।
২০১২ এশিয়া কাপ
ঢাকায় অনুষ্ঠিত এই টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত ছিল বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো মহাদেশীয় এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলে তারা। কিন্তু ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে মাত্র ২ রানে হেরে শিরোপা বঞ্চিত হয় বাংলাদেশ। সাকিব ছিলেন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়
মাশরাফী আবারও ইনজুরিতে পড়লে অধিনায়কত্ব ফিরে পান সাকিব। ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। পূর্ণ শক্তির টেস্ট দলের বিপক্ষে এটি প্রথম সিরিজ জয় বাংলাদেশের।
ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ
ভারত, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথভাবে ২০১১ বিশ্বকাপ আয়োজন করে বাংলাদেশ। স্বাগতিক হওয়ার সুবিধা নিতে পারেনি বাংলাদেশ। শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে হারালেও সাকিব-মুশফিকদের ব্যর্থতা ছিল চরমে। এতে অধিনায়কত্ব হারান সাকিব। পরে অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় মুশফিকুর রহিমকে।
ওয়ানডে বিশ্বকাপ-২০১৫
মাশরাফীর নেতৃত্বে ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলে বাংলাদেশ। পুরো দলের সঙ্গে সাকিবের পারফরম্যান্স ছিল দুর্দান্ত। প্রথমবারের মতো আইসিসির বৈশ্বিক আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ।
অধিনায়কত্ব ফিরে পাওয়া
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে মাশরাফী অবসর নিলে দ্বিতীয়বারের মতো অধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ পান সাকিব। পরে মুশফিকুর রহিমকে সরিয়ে টেস্ট অধিনায়কের দায়িত্বও দেওয়া তাকে।
২০১৯ বিশ্বকাপে সাকিব
২০১৯ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের সহঅধিনায়ক ছিলেন সাকিব। পুরো আসরে দুর্দান্ত খেলে আট ম্যাচে ৬০৬ রান করে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হিসেবে বিশ্বকাপ শেষ করেন তিনি।
তিন সংস্করণে রান ও উইকেট
এ পর্যন্ত ৭০টি টেস্ট ম্যাচ খেলে সাকিব রান করেছেন ৪ হাজার ৬০০; উইকেট নিয়েছেন ২৪২টি। এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ২৪৭টি; এই সংস্করণে তার রান ৭ হাজার ৫৭০, উইকেট শিকার করেছেন ৩১৭টি। এ ছাড়া টি-টোয়েন্টিতে ১২৯ ম্যাচে সাকিবের উইকেট ১৪৯; রান ২ হাজার ৫৫১।
এমসিসির সদস্য
২০১৭ সালে মেরিলবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) সদস্য নির্বাচিত হন সাকিব। ক্রিকেটের যাবতীয় নিয়মকানুন ও নানা পরিবর্তনসহ খেলার ভালো-মন্দ নিয়ে আইসিসিকে সুপারিশ করে এই কমিটি।
কাউন্টি ক্রিকেট ও আইপিএল
২০১০ সালে ইংল্যান্ডের সেকেন্ড ডিভিশন কাউন্টি দল ওরচেস্টারশায়ারে খেলেন সাকিব। ২০১২ সালের আইপিএলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেন সাকিব। শিরোপা জেতে তার দল কলকাতা নাইট রাইডার্স। ক্রিকইনফোর সেরা অলরাউন্ডার নির্বাচিত হন তিনি।
সমালোচনা ও নিষিদ্ধ
মাঠ ও মাঠের বাইরে বিভিন্ন কার্যকলাপের কারণে বিভিন্ন সময় সমালোচিত হয়েছেন এই তারকা। ২০১৪ সালের জুলাইয়ে তাকে ছয় মাসের জন্য ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করে বিসিবি। যদিও পরে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ কমানো হয়। এ ছাড়া জুয়াড়িদের কাছ থেকে একাধিকবার ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পেয়েও গোপন করায় ২০১৯ সালে তাকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে আইসিসি। তবে ভুল স্বীকার করার পর এক বছরের নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করা হয়।
সংসদ সদস্য নির্বাচিত
২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন সাকিব। মাগুরা-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ নির্বাচিত হন তিনি।
হত্যা মামলার আসামি
গার্মেন্টসকর্মী রুবেলকে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে সাবেক সংসদ সদস্য ও ক্রিকেটার সাকিবের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) আদাবর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। গত ২২ আগস্ট গার্মেন্টসকর্মী রুবেলের বাবা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছন। সাকিব আল হাসানকে মামলার ২৮ নম্বর এজাহার নামীয় আসামি করা হয়।
অবসর ঘোষণা
২৬ সেপ্টেম্বর অবসরের ঘোষণা দেন সাকিব। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার জানান দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে খেলেই অবসরে যাবেন তিনি। এ সময় সাকিব আরও জানান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপই ছিল এ সংস্করণে তার শেষ ম্যাচ। তবে ওয়ানডে খেলে যাবেন। পাকিস্তানে হতে যাওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর ওয়ানডে থেকে অবসরে যাবেন সাকিব।