তৌফিক আহমেদ তফছির,ওয়াশিংটননিউজ, ঢাকা ,১২ জুন, সোমবার,২০২৩: খুলনা ও বরিশাল সিটি নির্বাচন শেষ হয়েছে। এ নির্বাচনে বরিশালে প্রথম বারের মত নগর পিতা হলেন আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ। অন্যদিকে খুলনায় তৃতীয় বারের মত নগর পিতা হলেন তালুকদার আবদুল খালেক।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ৮৭ হাজার ৮০৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৮২৮ ভোট।
সোমবার (১২ জুন) রাত ৯টায় বরিশাল শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা কেন্দ্র থেকে এ ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির।
বরিশালে মোট ৫১ দশমিক ৪৬ শতাংশ ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। প্রায় দ্বিগুনেরও বেশি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন নৌকার প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ।
এদিকে জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙল প্রতীকের প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস পেয়েছেন ৬ হাজার ৬৬৫ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপন টেবিল ঘড়ি প্রতীকে পেয়েছেন ৭ হাজার ৯৯৯ ভোট।
জাকের পার্টির প্রার্থী মিজানুর রহমান বাচ্চু গোলাপ ফুল প্রতীকে পেয়েছেন ২ হাজার ৫৪৬ ভোট।
স্বতন্ত্র প্রার্থী আলী হোসেন হাওলাদার হরিণ প্রতীকে পেয়েছেন ২ হাজার ৩৮১ ভোট এবং আসাদুজ্জামান হাতি প্রতীকে পেয়েছেন ৫২৯ ভোট।
রিটার্নিং কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, বরিশালে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। সরকারি বিধি মোতাবেক প্রজ্ঞাপন জারি করে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।
এর আগে সকাল ৮টা থেকে সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট শুরু হলেও সোয়া ৯টার দিকে এজেন্ট বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপন। সকাল ১০টার দিকে লাঙল প্রতীকের প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের কর্মীরা নৌকার ভোটার ছাড়া কাউকে কেন্দ্রে ঢুকতে দিচ্ছে না।
দুপুর সোয়া ১২টার দিকে হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন তার ওপর হামলা ও বাধা প্রদানের। সেখানে অভিযোগ দিয়ে ২২ নং ওয়ার্ডে সাবেরা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের ওপর হামলা করা হয়। আহত অবস্থায় তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে সশরীরে উপস্থিত হয়ে অভিযোগ দেন। পরে সন্ধ্যায় ইসলামী আন্দোলন নির্বাচনের সকল ফলাফল প্রত্যাখান করে।
এদিকে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে টানা দ্বিতীয়বার বিজয়ী হয়েছেন নৌকার প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক। সোমবার (১২ জুন) ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮২৫ ভোট পেয়ে তিনি পুনরায় নগর পিতা নির্বাচিত হয়েছেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক এ নিয়ে তৃতীয় দফায় মেয়র নির্বাচিত হলেন।
এর আগে তিনি ২০০৮ ও ২০১৮ সালে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন।
সোমবার (১২ জুন) রাত পৌনে ৯টার দিকে খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বেসরকারিভাবে কেসিসি নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দীন।
ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, ২৮৯ কেন্দ্রে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন ভোটারের মধ্যে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৪৩৩ জন ভোট দিয়েছেন।
এ নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের মো. আব্দুল আউয়াল পেয়েছেন ৬০ হাজার ৬৪ ভোট। এছাড়া জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. শফিকুল ইসলাম মধু লাঙল প্রতীকে পেয়েছেন ১৮ হাজার ৭৮ ভোট, জাকের পার্টির এসএম সাব্বির হোসেন গোলাপ ফুল প্রতীকে পেয়েছেন ৬ হাজার ৯৬ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম শফিকুর রহমান টেবিল ঘড়ি প্রতীকে পেয়েছেন ১৭ হাজার ২১৮ ভোট।
খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দীন বলেন, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে। কোনো কেন্দ্র বন্ধ হয়নি। কোনো কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়নি। প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সকলের সহযোগিতায় নির্বাচন পরিচালনা করেছে। আমরা কথা দিয়েছিলাম খুলনাবাসীকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিব। এই ফলাফলের মধ্য দিয়ে খুলনাবাসীর বিজয় হয়েছে।
এর আগে সোমবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ২৮৯টি কেন্দ্রে বিরতিহীনভাবে চলে ভোটগ্রহণ। কোনো ধরনের সহিংসতা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয় ভোট। এবারই প্রথম খুলনা সিটির সব কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে) ভোটগ্রহণ হয়েছে।
সহিংসতার খবর না পাওয়া গেলেও কিছু কিছু জায়গায় ইভিএমে ভোট দিতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন ভোটাররা। প্রায় অনেক কেন্দ্রে ইভিএম ধীরগতিতে কাজ করেছে বলে অভিযোগ করেন ভোটার ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা।
এ নির্বাচনে সাধারণ ৩১টি ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে ১৩৬ জন, ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে এস এম খুরশিদ আহমেদ টোনা এবং ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে জেড এ মাহমুদ ডন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।