মঙ্গলবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ০২:৩৩ অপরাহ্ন

গ্রামটি এখন ‘নারী ফুটবলারদের গ্রাম’

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশের সময় : বুধবার, ১৭ মে, ২০২৩

ওয়াশিংটননিউজ,  ঢাকা, বুধবার, ১৭ মে ২০২৩ : রংপুর শহরের কোলাহলময় জীবন থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের একটি গ্রাম সদর উপজেলার সদ্যপুষ্করনি ইউনিয়নের পালিচড়া। এই গ্রামের মেয়েরা ফুটবল খেলে দেশে-বিদেশে। বিদেশের মাটিতে শিরোপা জয়ের সাফল্যও আছে তাদের। সেই সুবাদে পালিচড়া গ্রাম এখন নারী ফুটবলারদের গ্রাম হিসেবে পরিচিত। এই গ্রামের নারী খেলোয়াড়দের দল ‘সদ্যপুষ্করনি যুব স্পোর্টিং ক্লাব’ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ক্লাবভিত্তিক খেলায় শিরোপা জিতে আলোচনায় এসেছে।

পালিচড়া গ্রামের অধিকাংশ পরিবার কৃষিকাজ করে চলে। আর্থিক অসচ্ছলতা থাকলেও মেয়েদের ফুটবল খেলা থেমে থাকেনি। শুরুর দিকে কেউ কেউ তাচ্ছিল্য করলেও মেয়েদের সাফল্যে এখন তাঁরা পঞ্চমুখ।

ফুটবলে মেয়েদের ধারাবাহিক সাফল্যে পালিচড়া এম এন উচ্চবিদ্যালয় ও মজিদা খাতুন কলেজের মাঠে নির্মিত হয়েছে মিনি স্টেডিয়াম। সেই মাঠেই প্রতিদিন বিকেলে মেয়েরা ফুটবল অনুশীলন করে।

মিলন খান, কোচ, সদ্যপুষ্করনি যুব স্পোর্টিং ক্লাব

সদ্যপুষ্করনি যুব স্পোর্টিং ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও কোচ মিলন খান বলেন, ২০১৩ সালে এই ক্লাবের যাত্রা। ২০১৫ সালে সরকারিভাবে নিবন্ধন পায় তারা। এই গ্রামের মেয়েরা বাংলাদেশ নারী জাতীয় দলের পাশাপাশি জায়গা করে নিয়েছেন বয়সভিত্তিক দল ও ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে। এবার তারা পশ্চিমবঙ্গে ক্লাবভিত্তিক ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে শিরোপা জিতেছে। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া একমাত্র দল তারা। ভুটানের একটি ক্লাব ছিল। বাকি ছয়টি ক্লাব পশ্চিমবঙ্গের। এই টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া খেলোয়াড়দের বয়স ১৩ থেকে ১৭ বছর।

মিলন খান বলেন, ফুটবলে মেয়েদের ধারাবাহিক সাফল্যে পালিচড়া এম এন উচ্চবিদ্যালয় ও মজিদা খাতুন কলেজের মাঠে নির্মিত হয়েছে মিনি স্টেডিয়াম। সেই মাঠেই প্রতিদিন বিকেলে মেয়েরা ফুটবল অনুশীলন করে। তাদের অধিকাংশের বয়স ৮ থেকে ১৭ বছর। এই গ্রামের অন্তত ৩০ মেয়ে নিয়মিত ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত। তারা ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে এবং জাতীয় পর্যায়ে খেলার স্বপ্ন দেখেন। অভিভাবকেরা তাঁদের কাজের ফাঁকে খেলা দেখতে এসে উৎসাহ দেন।

দলের আরেক খেলোয়াড় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী জয়নব বিবি। তার বাবা রবিউল ইসলাম গ্রামের বাজারে চা বিক্রি করেন। তিনি বলেন, মেয়েদের জন্য গ্রামে একটি স্টেডিয়াম হয়েছে। সেখানে মেয়েরা নিয়মিত অনুশীলন করে।

শিরোপাজয়ী দলটি সোমবার দেশে ফিরেছে। সদ্যপুষ্করনি যুব স্পোর্টিং ক্লাবের অধিনায়ক সুলতানা আক্তার বলে, ‘এই চ্যাম্পিয়ন ট্রফি শুধু রংপুরের অর্জন নয়, এ অর্জন গোটা বাংলাদেশের।’

আমার তিন মেয়ে ফুটবল খেলে। দেশের বাইরে ইন্দোনেশিয়া, ভুটান, হংকং ও ভারতে খেলেছে। মেয়েদের কারণে এই গ্রামকে এখন সবাই নারী ফুটবলারদের গ্রাম বলে।

লাভলী বেগম, সাধারণ সম্পাদক, সদ্যপুষ্করনি যুব স্পোর্টিং ক্লাব

ক্লাব সূত্রে জানা গেছে, সিরাত জাহান, ইসরাত জাহান, মৌসুমী আক্তার, রুনা আক্তার, রুমি আক্তার, জয়নব বিবি, সুলতানা আক্তার, নুশরাত জাহান, লাবণী আক্তার, রেখা আক্তার দেশে-বিদেশে খেলেছে। ১০ নম্বর জার্সি পরে সিরাত জাহান গত বছর সাফ গেমসে সোনাজয়ী দলে খেলেছে।

সদ্যপুষ্করনি যুব স্পোর্টিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক লাভলী বেগম বলেন, ‘আমার তিন মেয়ে ফুটবল খেলে। দেশের বাইরে ইন্দোনেশিয়া, ভুটান, হংকং ও ভারতে খেলেছে। মেয়েদের কারণে এই গ্রামকে এখন সবাই নারী ফুটবলারদের গ্রাম বলে।’

ক্লাবের কোচ মিলন খান বলেন, খেলাধুলার অনুশীলনের জন্য যে পরিমাণ খাবারদাবারের যত্ন লাগে, এই মেয়েরা সেটা যথাযথ পায় না। এই কাজে এগিয়ে আসতে তিনি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহ্বান জানান।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ