ওয়াশিংটননিউজ , ঢাকা , শনিবার, ১৩ মে ২০২৩ :তিন দশক আগের ভয়ঙ্কর স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা; দেশের দুই সমুদ্রবন্দরে জারি করা হয়েছে মহাবিপদ সংকেত।
এ ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হানার আগে মোটামুটি এক দিন হাতে থাকতেই জানমালের ক্ষতি যতটা সম্ভব কমিয়ে আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রশাসন। কক্সবাজারকে অগ্রাধিকার দিয়ে পাঁচ লাখ মানুষকে সরিয়ে নিতে প্রস্তুত করা হয়েছে দেড় হাজারের বেশি আশ্রয়কেন্দ্র। নিচু ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে উপকূলীয় জেলাগুলোতে চলছে মাইকিং।
বর্তমান গতিপথ বজায় থাকলে রোববার দুপুর নাগাদ কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে মোখা। সে সময় ঘণ্টায় ১৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে বাতাসের গতি।
এ অবস্থায় কক্সবাজারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী আশ্রয়শিবিরে টিন, বাঁশ, কাঠ ও পলিথিন দিয়ে বানানো ঘরে থাকা কয়েক লাখ রোহিঙ্গার ভাগ্যে কী ঘটবে, তা নিয়ে রয়েছে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান অবশ্য আশাবাদী, বিগত বছরগুলোর মত এবারও সরকার ‘সফলভাবে’ ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে।
জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের পূর্বাভাসে মোখার সম্ভাব্য গতিপথ
ঘূর্ণিঝড়: কোন সংকেতে কী বোঝায়
ঘূর্ণিঝড়ে কী করবেন
মৃত্যু আর ধ্বংস নিয়ে ঘূর্ণিঝড় এসেছে বার বার
আবহাওয়া অফিস শুক্রবার রাতেই কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করেছে। আর পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ নদীপথে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বিআইডব্লিউটিএ। চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শনিবার সকাল ৬টা থেকে বিমান ওঠানামা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা বা ‘অ্যালার্ট-ফোর’ জারি করে জেটিতে থাকা জাহাজগুলোকে বহির্নোঙ্গরে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে মহেশখালীর নিকটবর্তী সাগরে ভাসমান দু’টি এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ সাময়িক বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বরিশাল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে রোববারের এসএসসি পরীক্ষা স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও রোববারের সব পরীক্ষা স্থগিত করেছে।
বাংলাদেশের স্থলভাগে তাপপ্রবাহ বয়ে চলার মধ্যে গত সোমবার দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোসাগর ও এর সংলগ্ন আন্দামান সাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়, যা ধাপে ধাপে শক্তিশালী হয়ে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ের রূপ পেয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় বুধবারই সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় কমিটির প্রস্তুতি সভা করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান। সেদিনই উপকূলীয় এলাকায় সব আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মিজানুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলায় ধারাবাহিক সভার অংশ হিসাবে বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ উপকূলীয় অন্তত ২০ জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট ইউএনওকে ভার্চুয়াল বৈঠকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়।
“আমাদের এখন মূল ফোকাল পয়েন্ট হল কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম। এর মধ্যে কক্সবাজারকে প্রায়োরিটি দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে সেন্টমার্টিন হচ্ছে ফোকাল এরিয়া।”
তিনি বলেন, “উপকূলীয় এলাকায় ইতোমধ্যে ধান কাটা শেষ হওয়ায় এখন বড় ধরনের স্বস্তি। কিন্তু আশ্রয় কেন্দ্রে পর্যাপ্ত খাবার, অবস্থানের সুব্যবস্থা, নারীর, শিশু ও বয়োঃবৃদ্ধদের বিশেষ নজর রাখাসহ যাবতীয় কাজগুলোর বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে।”
সেন্টমার্টিনে স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়া কোনো পর্যটক এখন নেই জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, “স্বেচ্ছাসেবকরা যাবতীয় সহযোগিতা করছে, আশ্রয় কেন্দ্রও প্রস্তুত; এক সপ্তাহের খাবার মজুদ আছে আমাদের।”
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ৫ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করার কথা জানিয়ে সব আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার কথা বলেন মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, “ঝুঁকিপূর্ণ যাদের দরকার হবে, তখন তাদের সরিয়ে নেওয়া হবে। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে আরআরআরসি, দেশি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা কাজ করছে। ভাসানচরে তুলনামূলক ভালো অবকাঠামো থাকায় কিছুটা স্বস্তি।”