ওয়াশিংটননিউজ , ঢাকা,০৬ জুন, মঙ্গলবার,২০২৩: দেশজুড়ে বয়ে যাওয়া প্রচন্ড তাপপ্রবাহে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। চলতি বছর অন্যান্য বছরের চেয়ে তাপের তীব্রতা ক্রমশ বাড়ছে। অসহনীয় গরমে পুড়ছে দেশ। বৃষ্টি নেই। গরমে শরীর না ঘামলেও অনুভূত হচ্ছে অসহনীয় তাপ; যেন শরীর জ্বালাপোড়া করে পুড়ে যাচ্ছে! অসুস্থ হয়ে পড়ছেন মানুষ। আবহাওয়ার এমন বৈরিভাব নিকট অতীতে দেখা যায়নি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বাতাসের আর্দ্রতা কমে বাতাস শুষ্ক হয়ে যাওয়ার ফলে সূর্যের তাপ শরীর থেকে পানি শুষে নিচ্ছে। ফলে আমাদের ত্বক জ্বালাপোড়া করছে। এরই মধ্যে গরম নিয়ে কোনো সুসংবাদ দিতে পারেনি আবহাওয়া অফিস। গতকাল আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহধিককালেরও বেশি গরম অব্যাহত থাকবে। গত কয়েক দিনে স্বাভাবিকের তুলনায় ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি তাপদাহ রেকর্ড হয়েছ। আপাতত মুক্তি নেই জ্বালাপোড়া গরম থেকে। বর্ষাবাহী মৌসুমি বায়ু এখনো প্রবেশ করেনি দেশে। মৌসুমী বায়ু প্রবেশের পর ক্রমশ তাপদাহ কমবে।
এদিকে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মডেল বিশ্লেষণ করে জানিয়েছেন, চলতি তাপপ্রবাহ চলার আশঙ্কা রয়েছে ১৪ জুন পর্যন্ত। ইউরোপীয়ান মডেল অনুসারে ৯ জুন রাজশাহী বিভাগের কোন কোন জেলায় তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে। ১৪ জুন পর্যন্ত সিলেট, চট্টগ্রাম বিভাগ ছাড়া অন্য বিভাগগুলোতে বৃষ্টির সম্ভাবনা অতি সামান্য।
মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, জাপানের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে থেকে প্রাপ্ত চিত্রমালায় বাংলাদেশের আকাশে খুব সামান্য পরিমাণের মেঘের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাস্পযুক্ত বাতাস রাজশাহী ও চট্রগ্রাম বিভাগের ওপর দিয়ে বাংলাদেশের স্থলভাগে প্রবাহিত হচ্ছে। যে কারণে দেশের সকল জেলায় আর্দ্রতা ৪০-৮০% বিরাজ করছে। আগামী ১৫ জুনের পর থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত বর্ষা মৌসুমের বৃস্টিপাত পুরোদমে শুরু হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু তথা বর্ষা টেকনাফ উপকূলে পৌঁছাতে পারে। সেক্ষেত্রে বাড়বে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা। এই সময় জুড়ে তাপপ্রবাহের সঙ্গে থাকবে ভ্যাপসা গরমও। তবে কোথাও কোথাও বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হলে সাময়িকভাবে কমবে গরম অনূভূতি। তবে দেশের বেশির ভাগ জায়গায় আপাতত বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।
গতকাল আবহাওয়া অধিদপ্তরের বুলেটিনে বলা হয়েছে, গতকাল কোথাও বৃষ্টি হয়নি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, জুনেও স্বস্তি মিলবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও আবহাওয়া বিজ্ঞানী ড. তৌহিদা রশিদ বলেন, এবারে তাপপ্রবাহ লম্বা সময় ধরে ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। এমন কিন্তু প্রতি বছর হয় না। গত ১০ মাসে সারা পৃথিবীর তাপমাত্রা দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। চলতি বছর ১ দশমিক ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। কাজেই এবারের তাপপ্রবাহের পেছনে যে গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের (বৈশ্বিক উষ্ণায়ন) প্রভাব রয়েছে,এতে কোনো সন্দেহ নেই।
গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহীতে ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এ ব্যাপারে আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, গতকাল ঢাকার স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকার কথা ছিল। কিন্তু রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর মানে ঢাকার তাপমাত্রা ৫.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।