ওয়াশিংটননিউজ, ক্রীড়া ডেস্ক ,ঢাকা,১৬ জুন, শুক্রবার,২০২৩: ‘কদিন বেশ বৃষ্টি হয়েছে। তাই উইকেট একটু বেশি সবুজ দেখাচ্ছে।’ পিচ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ঢাকা টেস্ট শুরুর আগের দিন অফিসিয়াল প্রেস কনফারেন্সে ওপরের মন্তব্যই করেছিলেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।
বাংলাদেশ হেড কোচের সে কথা শুনে কেউ কেউ হয়তো ভেবেছিলেন, শেরে বাংলার পিচের ওপরের স্তরের সবুজ ঘাস বুঝি সত্যিই বৃষ্টির কারণে একটু বেশি সতেজ ও সবুজ দেখাচ্ছে। এটা আসলে মোটেই পেসবোলিং ফ্রেন্ডলি পিচ নয়।
কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিন সকালের সেশনে প্রথমে আফগান ফাস্টবোলার নিজাত মাসুদ আর পরে এবাদত ও শরিফুলের বোলিং পরিষ্কার বলে দিলো, শেরে বাংলার পিচের ওই সবুজ ঘাস শুধুই বৃষ্টির দান নয়। এটা সত্যিই ওপরের স্তরের ঘাস।
অনেকদিন পর শেরে বাংলার উইকেট পেস সহায়। যার সাথে ‘টিপিক্যাল’ শেরে বাংলা পিচের কোনই মিল নেই। বল পড়ে একটা ভালো গতি ও চমৎকার উচ্চতায় ব্যাটে এসেছে। কচি ঘাসে পড়েই হোক কিংবা পেসারদের হাতের ছোঁয়া বা কারুকার্যে; সুইং করেছে। কিছু ডেলিভারি বেশ বাড়তি বাউন্স পেয়েছে। যা ছিল অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি।
মোদ্দা কথা, পেস বোলারারদের অনুকূল ক্ষেত্র। যে বা যারা ভালো জায়গায় বল ফেলতে পেরেছেন, তারা সফলও হয়েছেন। শুরু করেছেন আফগানিস্তানের অভিষেক হওয়া দ্রুতগতির বোলার নিজাত মাসুদ।
বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে আউট হন মেহেদি হাসান মিরাজ। মিরাজ অবশ্য নিজাত মাসুদের শিকার নন। আরেক পেসার ইয়ামিন আহমাদজাইয়ের বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দেন মিরাজ। অফস্টাম্পের বাইরে খানিক লাফিয়ে ওঠা ডেলিভারি পয়েন্ট ও গালির মাঝখান দিয়ে গলাতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে বসেন মিরাজ।
উইকেটে বাড়তি বাউন্স ও মুভমেন্ট আছে, মুশফিকুর রহিমের আউট হওয়া দেখেই তা বোঝা যায়। নিজাত মাসুদের অফস্টাম্পের সামান্য বাইরে পিচ পড়া ডেলিভারি হঠাৎ লাফিয়ে চলে আসে ব্যাটে। মুশফিক তা মাটিতে নামাতে পারেননি।
বল ব্যাটের ওপরের দিকের বাইরের কোনায় লেগে চলে যায় স্লিপ ফিল্ডারের হাতে। তারপর ভোজবাজির মত বাংলাদেশ ইনিংসের লেজ মুড়িয়ে যায়। শেষ ৫ উইকেটের পতন ঘটে মাত্র ৯ রানে ।
এরপর শুরু হয় এবাদত হোসেন আর শরিফুল ইসলামের বারুদ মাখা বোলিং। যাতে জ্বলেপুড়ে ছারখার আফগান ব্যাটিং। শুরু করেন বাঁহাতি শরিফুল। তার কৌণিক ডেলিভারিতে অফস্টাম্পের বাইরে পরাস্ত হয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান আফগান ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান।
তারপর ইবাদতের খানিক শর্ট অফ লেন্থ থেকে উঠে আসার ডেলিভারির অনুপম প্রদর্শনী। ১০ ওভারে ৪৭ রানে ৪ উইকেটের পতন ঘটান এবাদত। সবকটাই খাটো লেন্থ থেকে বাড়তি উচ্চতায় লাফিয়ে আসা ডেলিভারিতে।
আর তাতেই একের পর এক আফগান ব্যাটার হয় উইকেটের পিছনে স্লিপে, না হয় ফরোয়ার্ড শর্ট লেগ কিংবা সিলি মিডঅন বা শর্ট মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন।
এবাদতের খাটটা লেন্থে পড়া বাড়তি বাউন্সে প্রথম সাজঘরে ফেরত যাওয়া আফগান হলেন আব্দুল মালিক। খাটো লেন্থ থেকে বাড়তি উচ্চতায় লাফিয়ে আসা ডেলিভারি মাটিতে নামাতে পারেননি মালিক।
অফস্টাম্পের ঠিক বাইরে মালিকের ব্যাট ছুঁয়ে বল চলে যায় থার্ড স্লিপে। সামনে শরীর ফেলে জাকির হাসান মাটির ওপর থেকে তা ধরেও ফেলেন।
এরপর এবাদতের বাড়তি বাউন্সে পরাস্ত হন রহমত শাহ। মাথার ওপরের শর্ট ডেলিভারি পুল করতে গিয়ে টাইমিংয়ের হেরেফেরে শর্ট মিডউইকেটে ক্যাচ তুলে দেন রহমত। আফসার জাজাইও এবাদতের খাটো লেন্থ থেকে উঠে আসা ডেলিভারিতে পুল করে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন।
এবাদতের সেই খাটো লেন্থের বাড়তি উচ্চতায় উঠে আসা বোলিংয়ের চতুর্থ শিকার আমির হামজা। তিনিও শট বল পিছনে গিয়ে ডিফেন্স করতে গিয়ে শর্ট লেগে ক্যাচ তুলে দেন। শর্ট ফাইন লেগে ওৎ পেতে থাকা মুমিনুল এক হাতে তা ধরে ফেলেন।