ওয়াশিংটননিউজ , ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ মে ২০২৩ :বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলেছেন, তাঁরা বছরখানেক ধরে গতানুগতিক নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করলেও এখন ভিন্ন ভাবনা নিয়ে মাঠে নামছেন। সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনের পথ তৈরি করাই এবারের কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য। এ লক্ষ্যে আজ শুক্রবার থেকে সারা দেশে নতুন কর্মসূচি শুরু হচ্ছে।
নেতারা বলছেন, ঈদুল ফিতর উদযাপনের জন্য নেতাকর্মীদের বেশ কিছুদিন কর্মসূচি থেকে বিরত রাখা হয়েছিল। আজ থেকে সারা দেশে যে জনসমাবেশ শুরু হবে, তা আন্দোলনে নতুন মাত্রা দেবে।
দলটির নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, জুলাইকে সামনে রেখে বিএনপি চূড়ান্ত আন্দোলনের পরিকল্পনা করেছে। তবে চলমান কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন জমে গেলে যেকোনো সময় নেতাকর্মীদের মাঠে নামার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। সম্প্রতি বিএনপি এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের রুদ্ধদ্বার বৈঠকগুলোতে এমন বার্তাই দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোও একই সময়ে পৃথক কর্মসূচিতে মাঠে থাকবে। ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতন্ত্র মঞ্চ, গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোটও কর্মসূচি ঘোষণা করছে।
বিএনপি সূত্র জানায়, সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে আজ থেকে টানা এক সপ্তাহ কর্মসূচি চলবে। এরপর আগামী ৩০ মে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে দুই সপ্তাহ কর্মসূচি চলবে। এর ফাঁকে আরো কয়েকটি রাজনৈতিক কর্মসূচি দিতে পারে দলটি। জাতীয় নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই রাজপথের কর্মসূচিতে মনোযোগী হচ্ছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।
বিএনপি নেতারা জানান, আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির কোনো নেতা অংশ নিচ্ছেন না। সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে নিয়েও এখন আর তেমন সংশয় দেখছেন না তাঁরা। এর বাইরে গাজীপুরে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হওয়ায় ২৯ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ফলে অন্য সিটিতে যাঁরা প্রার্থী হতে চাচ্ছেন, তাঁরা একটি বার্তা পাবেন। কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল নেতারা বলেন, এর উদ্দেশ্য হচ্ছে কর্মীদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে এনে দলকে পুরোপুরি আন্দোলনমুখী করা।
নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা, গ্রেপ্তার, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদ এবং ১০ দফা দাবিতে গত ১৩ মে ঢাকার সমাবেশ থেকে চার ধাপে সারা দেশের জেলা ও মহানগরীতে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। আজ ঢাকা মহানগর উত্তরসহ ২৮ জেলা ও মহানগরে জনসমাবেশের মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচির প্রথম ধাপ শুরু হচ্ছে।
আগামীকাল শনিবার ২০ মে ঢাকা মহানগর দক্ষিণসহ ২১ জেলা ও মহানগরে, ২৬ মে ঢাকা মহানগর উত্তরসহ ১৯ জেলা এবং ২৭ মে ঢাকা মহানগর দক্ষিণসহ ১৫ জেলা ও মহানগরে একইভাবে জনসমাবেশ হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘সাধারণ মানুষ এমনকি যারা দিনে এনে দিনে খায়, তারাও আমাদের কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, আমাদের কর্মসূচি চূড়ান্ত পর্যায়ের দিকে যাচ্ছে।’
২৩ এবং ২৮ মে মহানগর পর্যায়ে পদযাত্রা : গতকাল নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ১০ দফাসহ বিভিন্ন দাবিতে সব মহানগরীতে আগামী ২৩ এবং ২৮ মে দুই দিন পদযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
ঢাকা মহানগরও কর্মসূচিমুখর থাকছে : গত ১৭ মে ঢাকার দুই প্রান্তে দুটি পদযাত্রা করেছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি। কর্মসূচিতে ব্যাপক শোডাউন করেন দলের নেতাকর্মীরা। আগামী ২৩ মে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ধানমণ্ডি থেকে পদযাত্রা করবে। আর উত্তরে পদযাত্রা শুরু হবে গাবতলীর বাগবাড়ী আইএফআইসি ব্যাংকের সামনে থেকে।
সমমনা দল ও জোটের কর্মসূচি : সরকার পরিবর্তন ও শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্যে গত বুধবার রোডমার্চসহ তিনটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের বাইরে থেকে আপাতত এই কর্মসূচি পালন করবে তারা। কর্মসূচি হচ্ছে, ২৩ মে মঙ্গলবার ঢাকা দক্ষিণের পদযাত্রা। ২৮ মে ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা। ৪ জুন থেকে ৭ জুন ঢাকা থেকে দিনাজপুর অভিমুখে রোডমার্চ।
আজ বিকেল ৪টায় পুরানা পল্টন কালভার্ট রোড এলাকায় ‘দুর্নীতি ও দুঃশাসন’বিরোধী গণসমাবেশ করবে গণঅধিকার পরিষদ। একই দিন যুগপৎ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। একই দাবিতে শনিবার রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল করবে ১২ দলীয় জোট।
কূটনীতিকদের সঙ্গে বিএনপির দুই নেতার বৈঠক : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির প্রধান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন ও ব্রিটিশ দূতাবাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানা গেছে। গতকাল গুলশানে আমেরিকান ক্লাবে দুপুর পৌনে ২টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা তাঁরা বৈঠক করেন। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের রাজনৈতিক বিভাগের প্রধান ব্র্যান্ডন স্কট, ফার্স্ট সেক্রেটারি ম্যাথিউ বে এবং যুক্তরাজ্য দূতাবাসের রাজনৈতিক কনস্যুলার ড্যানিয়েল শেরি ছিলেন।
এদিকে গণঅধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক নুর ব্রিটিশ হাইকমিশনে গিয়ে দূতাবাসের রাজনৈতিক বিভাগের প্রধান টম বুর্জের সঙ্গে বৈঠক করেন।