ওয়াশিংটননিউজ, ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ মে ২০২৩ : স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির পরেই করোনা মহামারির সবচেয়ে বড় আঘাতটা আসে শিক্ষায়। মহামারির কারণে বাংলাদেশে নজিরবিহীনভাবে একটানা ৫৪৩ দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়। জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর মতে, এ সময়ে প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষের বাইরে ছিল। দীর্ঘদিন শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সামগ্রিকভাবে শিক্ষায় এবং একটি প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের যে দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান ক্ষতি হয়েছে, তার প্রভাব নিশ্চিতভাবেই সুদূরপ্রসারী।
করোনাকালে রেডিও, টেলিভিশন, অনলাইন মাধ্যমে বিকল্প উপায়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হলেও সমন্বিত পরিকল্পনা, সচেতনতা ও প্রযুক্তির প্রবেশগম্যতার সুযোগ না থাকায় শিক্ষার্থীদের শিখনক্ষতি হয়েছে। শিক্ষাবিদেরাও নানান সময়ে শিক্ষার্থীদের শিখনক্ষতি নিয়ে নানাভাবে সতর্ক করেছেন এবং তা কাটিয়ে উঠতে পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু শিক্ষা বিভাগকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। অবশেষে দেরিতে হলেও সরকারিভাবে পরিচালিত গবেষণায় করোনাকালে শিক্ষার্থীদের শিখনক্ষতির বিষয়টি উঠে এল।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিখনঘাটতি আগে থেকেই ছিল, করোনা মহামারি আরও বাড়িয়ে তুলেছে। শিখনক্ষতির কারণ হিসেবে গবেষণায় উঠে এসেছে, শ্রেণিকক্ষে সরাসরি পাঠদান বন্ধ থাকায় বিকল্প উপায়ে টেলিভিশন, রেডিও, অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার যেসব কার্যক্রম নেওয়া হয়েছিল, তাতে সব এলাকার সব শিক্ষার্থী সমানভাবে অংশ নিতে পারেনি। দৃষ্টান্ত হিসেবে, গবেষণার ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ।
গবেষণাটি করা হয়েছে বাংলা, ইংরেজি, গণিতের মতো ‘অবশ্যই শিখতে হবে’ এমন বিষয়ের ওপর। ফলে সামগ্রিকভাবে করোনাকালে শিক্ষার্থীদের শিখনক্ষতি যে আরও বেশি, তা বলাই বাহুল্য। শিক্ষার্থীর শিখনক্ষতির বিষয়টি একটি দিক, করোনা মহামারিতে শিক্ষার ক্ষতিটা আরও ব্যাপক ও বহুমুখী। ২০২২ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের করা বিদ্যালয়শুমারির তথ্য বলছে, ২০২১ থেকে ২০২২ এই এক বছরে দেশে প্রায় ৮ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। এর আগের বছরের শুমারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছিল প্রায় ১৪ হাজার। বন্ধ হয়ে যাওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেসরকারি বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেনই বেশি। দুই বছরে এতগুলো বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি অশনিসংকেত। কেননা প্রাথমিকের শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ার ইঙ্গিত এতে মিলছে।
এনসিটিবির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের ক্ষতি ও ঘাটতি অবিলম্বে পূরণ করা প্রয়োজন, না হলে কম দক্ষতার প্রজন্ম তৈরি হতে পারে। আমরা মনে করি, সরকারি সংস্থার গবেষণায় যখন করোনা মহামারিকালে শিক্ষার্থীদের শিখনক্ষতির স্বীকৃতি মিলল, তখন কালক্ষেপণ না করে সেটা কাটিয়ে ওঠার উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষার্থীরা যাতে শিখনক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারে, সে জন্য বিশেষ কর্মসূচি ও পরিকল্পনা প্রয়োজন।