মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৩৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম

শরণার্থী হয়ে থাকতে আমরা মিয়ানমার যাবো না’

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ৫ মে, ২০২৩

ওয়াশিংটননিউজ, ঢাকা, ০৫ মে, শুক্রবার,২০২৩: মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সেখানকার ‘পরিবেশ-পরিস্থিতি’ দেখে ফিরে এসেছে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধি দল। শুক্রবার (৫ মে) সন্ধ্যা ৬টার দিকে তারা টেকনাফ জেটি ঘাটে পৌঁছায়।

জেটি ঘাটেই অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন রাখাইন রাজ্য ঘুরে আসা রোহিঙ্গা মো. সেলিম। তিনি বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারে পৌঁছার পর তাদের তৈরি করা ক্যাম্পে আমাদের নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, এগুলো কাদের জন্য? মিয়ানমার প্রতিনিধিরা উত্তরে বললো, এসব ক্যাম্প আমাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। আমাদের প্রত্যাবাসন করা হলে এসব ক্যাম্পে রাখা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তখন আমরা তাদের (মিয়ানমার প্রতিনিধিদের) বললাম, আমরা ক্যাম্পে কেন থাকবো? আমরা এ দেশের (মিয়ানমারের) নাগরিক। আমরা আমাদের নিজেদের বাড়িঘরে ফেরত যাবো।’

সেলিম বলেন, ‘আমরা তাদের (মিয়ানমার প্রতিনিধিদের) বলেছি, আমরাসহ মিয়ানমারের ৩৬ জাতি আছে। ৩৫ জাতি যদি নাগরিক সুবিধা নিয়ে থাকতে পারে, আমরা কেন পাবো না? আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার নাগরিকত্বসহ এম্বাসি কার্ড না পেলে মিয়ানমার ফিরে যাবো না।’

এর উত্তরে মিয়ানমার প্রতিনিধিরা সেলিমদের নাগরিকত্ব কার্ড সরবরাহ করবে না বলে সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন বলে উল্লেখ করে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদল। আর পূর্ণ নাগরিকত্ব ছাড়া মিয়ানমার যাওয়া মানে অতিথি হয়ে থাকা। এমনটি হলে তারা যেকোনো মুহূর্তে আবার রোহিঙ্গাদের বের করে দিতে পারে বলে মন্তব্য করেন রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দলের সদস্য মো. সেলিম।

রাখাইন রাজ্য ও আশপাশ দেখে ফেরা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে আসা মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের কাছে আমরা প্রস্তাব রেখেছিলাম যারা প্রত্যাবাসিত হবেন তাদের জন্য প্রত্যাবাসন পরবর্তী কী অ্যারেঞ্জমেন্ট রয়েছে তা যেন রোহিঙ্গাদের স্বচক্ষে দেখানো হয়। তারা আমাদের সে প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন এবং তাদের প্রস্তাবে আমরা শুক্রবার সকালে ২০ সদস্যের রোহিঙ্গা দল নিয়ে মিয়ানমারের মংডু টাউনশিপে যায়। সেখানে রোহিঙ্গাদের জন্য তৈরি করা ঘরগুলো আমাদের ঘুরিয়ে দেখানো হয়েছে। আমাদের সঙ্গে দেখেছেন রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরাও।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের মন্দ লাগেনি। সবকিছু গোছানো মনে হয়েছে। তবে, মূলত এগুলো বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্যই। আমরা তাদের প্রত্যাবাসনের আয়োজক মাত্র। যারা প্রত্যাবাসিত হবেন তাদের এগুলো দেখানোই ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমার প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গা দলকে এসব বিষয়ে ব্রিফিং করেছেন। তারা (রোহিঙ্গারা) কী দেখেছেন তারাই বলতে পারবেন। পরবর্তী পদক্ষেপ গণমাধ্যমকে অবশ্যই জানানো হবে।’

রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দলের বক্তব্য—নাগরিকত্ব ছাড়া সেখানেও আশ্রিত জীবনে তারা যাবেন না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরআরআরসি মিজানুর রহমান বলেন, ‘এটা দীর্ঘ অর্ধশত বছর ধরে চলে আসা সমস্যা। এটাতো আমরা দু-একদিনে সমাধান করতে পারবো না। আমরাতো ২০ জনকে সঙ্গে নিয়েছিলাম। একজন কী বলেছেন সেটা গণ্য নয়, সবার মতামত আমরা জানবো।’

এর আগে, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় টেকনাফের নাফনদের জেটি ঘাট হয়ে প্রতিনিধিদলটি মিয়ানমারের মংডু শহরের উদ্দেশ্যে টেকনাফ ত্যাগ করেন বলে জানান টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।

প্রতিনিধিদলে ২০ জন রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতার সঙ্গে বাংলাদেশ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের ছয় কর্মকর্তা এবং একজন দোভাষী ছিলেন। ২৭ জনের প্রতিনিধি দলটি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের আইডিপি ক্যাম্পের পরিস্থিতি দেখার পর সন্ধ্যা ৬টার দিকে আবারও টেকনাফ জেটি ঘাটে ফিরে আসে।

এর আগে রাখাইনে যেতে তালিকায় থাকা ২০ রোহিঙ্গাকে বৃহস্পতিবার (৪ মে) সন্ধ্যায় টেকনাফের নাইটংপাড়ায় বিআইডব্লিউটিএ ‘নন্দী নিবাস’ রেস্ট হাউজে রাত্রিযাপনের নিয়ে আসা হয়।

মিয়ানমারে যাওয়া ২৭ সদস্যের মধ্যে ৩ নারীসহ ২০ জন রোহিঙ্গা, একজন অনুবাদক ও ৬ জন বিভিন্ন দপ্তরের বাংলাদেশি কর্মকর্তা ছিলেন। নিরাপত্তার জন্য বিজিবির দুটি স্পিডবোটসহ ১৬ জন বিজিবি সদস্যও যান।

এর আগে ১৫ মার্চ টেকনাফ হয়ে বাংলাদেশে আসে মিয়ানমার সরকারের ১৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। তারা বাংলাদেশে আশ্রিত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিকদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের দেওয়া রোহিঙ্গাদের তালিকা যাছাই-বাছাই করেন।

প্রতিনিধি দলটি টানা সাতদিন টেকনাফের স্থলবন্দর রেস্ট হাউজে অবস্থান করে বাংলাদেশে আশ্রিত ১৪৭ রোহিঙ্গা পরিবারের মোট ৪৮৬ জনের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। আর তাদের দেওয়া বক্তব্য রেকর্ড করেন। ২২ মার্চ সকালে প্রতিনিধি দলটি নাফ নদী পার হয়ে মিয়ানমারে ফিরে যায়।

ওইসময় মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, যাদের প্রত্যাবাসন করা হবে সেসব রোহিঙ্গা যাতে আগে থেকে রাখাইনের সার্বিক পরিবেশ স্বচক্ষে দেখে আসতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। তারই ধারাবাহিকতায় রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দল শুত্রবার রাখাইন যায়।

আরআরআরসি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢল শুরু হওয়ার পর ২০১৮ সালে বাংলাদেশ মিয়ানমারের কাছে প্রত্যাবাসনের জন্য ৮ লাখ ৮২ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা দিয়েছিল। সে তালিকা যাছাই-বাছাই করে মাত্র ৬৮ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা চূড়ান্ত করে তা বাংলাদেশের কাছে ফেরত পাঠিয়েছিল মিয়ানমার।

এর আগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের আসা শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট। এরপর কয়েক মাসের মধ্যে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে ওই এলাকার ক্যাম্পে বসবাস করছিলেন আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ